Logo




প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চিংড়িতে ক্ষতিকর কেমিকেল পুশ করা হচ্ছে , আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা

প্রতিবেদকের নাম :
আপডেট করা হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭

চিংড়ি চাষ অধ্যুষিত খুলনার পাইকগাছার প্রত্যন্ত এলাকায় চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ যেন কোনো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছেনা। পুশবিরোধী অভিযান না থাকায় মৌসুমের শুরু থেকেই অতি মুনাফালোভী ও অসাধু চিংড়ি ব্যবসায়ীরা চিংড়ি মাছের দেহে অপদ্রব্য পুশ করে যাচ্ছে।

বিভিন্ন মাছ কোম্পানি ও স্থানীয় প্রশাসনের পরোক্ষ মদদে তারা এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা যেন এনিয়ে প্রতিযোগীতায় নেমেছে। এতে করে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চিংড়ির মান হ্রাস হওয়ায় তা বন্ধের আশংকা করছেন এলাকার চিংড়ি চাষীরা।

জানা গেছে, উপজেলার কপিলমুনি সদর সহ প্রতাপকাটি, ভৈরবঘাটা, কাজিমুছা, আগড়ঘাটা, কাশিমনগর, আগ্রা, রামনগর, রেজাকপুর, লতার শামুকপোতা বাজার, মানিকতলা সহ প্রত্যন্ত এলাকার ডিপো মালিক ও ফড়িয়ারা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে তা কোম্পানিতে পাঠাচ্ছে।

একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, অধিক মুনাফার আশায় চিংড়িতে ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়ির দেহে বর্তমানে এ্যারারুড, ভাতের মাড়, ভারতীয় এক ধরণের পাউডার ও জেলী পুশ করা হচ্ছে। এ নিয়ে পত্রিকান্তে বিভিন্ন সময় ব্যাপক লেখালেখি হলেও এনিয়ে জেলা বা উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাদের বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। এমনকি এর আগে বছরে একবার করে মৎস্য অফিসের নেতৃত্বে পুশবিরোধী অভিযান পরিচালনা করলেও দীর্ঘদিন তাদেরও কোনো কার্যক্রম নেই বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। তবে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মৎস্য ডিপোতে র‌্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ড এবং মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর পুশ বিরোধী অভিযান পরিচালনাকালে চিংড়ির চালানগুলি পাঠানো হয় চট্টগ্রামের কোম্পানিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা জানান, নগরীর জিরোপয়েন্ট এলাকার ফারুক সী ফুডস, রূপসার সালাম সী ফুডস, ইন্টারন্যাশনাল সী ফুডস, ন্যাশনাল সী ফুডস, রোজেমকো সী ফুডস, বটিয়াঘাটা উপজেলার ট্রাস্ট সী ফুডসসহ ঢাকার সাভার, সদরঘাট, কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম, যশোর, চাঁদপুর, কক্সবাজার, পটুয়াখালী ও ফেনীসহ বিভিন্ন স্থানের আড়ৎ ও মাছ কোম্পানিতে চালান করা হয়।

এলাকাবাসী জানান, প্রথমত অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন গোপন স্থানে পুশ কার্যক্রম চালালেও বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা এক প্রকার প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্ম।

সূত্র জানায়, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রতি ডিপিা ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নেয়া হয়।

জানাযায়, ৯০’র দশক থেকে পাইকগাছা এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ব্যাপকভাবে চিংড়ি চাষ শুরু হলেও প্রথমত এলাকার ব্যবসায়ীরা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করত না। প্রথমত সাতক্ষীরার-কালিগঞ্জ, শ্যামনগর এলাকার ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ শুরু করেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে খুলনার বিভিন্ন এলাকায় এর বিস্তার ঘটে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ঘের, ডিপো, কাটা বা আড়ৎ থেকে মাছ কিনে স্থানীয় শিশু ও নারী শ্রমিকদের দিয়ে চিংড়ির ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে ঐ সকল অপদ্রব্য পুশ করানো হয় চিংড়ির দেহে। এর পর তা বরফে ভিজিয়ে বিক্রি করা হয় পরের দিন।

অপদ্রব্য পুশযুক্ত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করায় এর আগে ধরা পড়ে ইউরোপীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর পর বহু দেন-দরবার ও চুক্তির মাধ্যমে পুনরায় চিংড়ি রপ্তানি চালু হয়। তবে বর্তমানে ব্যাপকহারে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ শুরু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম প্রধান মাধ্যম চিংড়ি শিল্প নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে। আর এমনটি হলে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতির উপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীরা আরও জানান, ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা দু’ধরণের পাউডার একসাথে মিশিয়ে জেলি তৈরি করা হয়। এসব জেলী বাগদা ও গলদা চিংড়ির দেহে পুশ করে ওজন বৃদ্ধি করা হয়। যা মানব স্বাস্থ্য’র জন্য ব্যাপক হুমকি স্বরুপ। খুলনা সহ কপিলমুনির বিভিন্ন দোকান থেকে একটি চক্র এ পাউডার কিনে এনে ব্যবসায়ীদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে। এই জেলী খুব আঁঠালো ও স্বচ্ছ হওয়ায় সহজে এসব পুশকৃত চিংড়ি ধরা পড়েনা। এমনকি তা সহজে চিংড়ির শরীর থেকে বেরিয়ে পড়েনা।

এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা সেনেট্যারি কর্মকর্তা উদয় কুমার মন্ডল জানান, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তার না মৎস্য কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর এর তদারকি করেন।

পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ বলেন, এব্যাপারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লোকবল কম হওয়ায় অল্প সময়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ খুলনা’র উপ-পরিচালক প্রফুল্ল¬ কুমার সরকার জানান, র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সহযোগিতায় পুশ বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। পুশের দায়ে অনেককে জেল জরিমানাও করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এতকিছুর পরও যারা পুশব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের অচিরেই আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য

মন্তব্য





এই ধরনের আরও খবর

ফেসবুকে আমরা




Theme Created By ThemesDealer.Com