Logo




বগুড়ার শেরপুরে সিন্ডিকেটের দখলে জীবন রক্ষাকারী ঔষধের মূল্য

প্রতিবেদকের নাম :
আপডেট করা হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭

বগুড়ার শেরপুরে ঔষধের বাজার এখন কতিপয় ঔষধ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দখলে, উপজেলা ড্রাগিষ্ট এন্ড কেমিষ্ট সমিতির কতিপয় শীর্ষ নেতাদের বেপরোয়া কর্মকান্ড নিয়ে চরম ক্ষোভ অসন্তোষ বিরাজ করছে জনমনে। সর্ব্বোচ খুচরা মুল্য(এমআরপি)’র নামে ঔষধের বাজারে নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওষুধ বিক্রির প্রতিষ্ঠান ফার্মেসি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত ভঙ্গ করছে লাইসেন্সের শর্ত। বিক্রি করছে বে-আইনি ওষুধ। কিছু ওষুধ নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণের বিধিবদ্ধ নিয়ম থাকলেও সে ব্যবস্থা নেই অনেক ফার্মেসিতে।

জানা গেছে, উপজেলা শহর সহ গ্রামের বেশিরভাগ ফার্মেসিরই কোনো লাইসেন্স নেই। ফলে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফার্মেসিগুলোর অধিকাংশই বিক্রি করছে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, অনুমোদনহীন ঔষধ। ঔষধ বিক্রি এক সময় ‘অভিজাত ব্যবসা’ হিসেবে স্বীকৃত পেলেও এখন তা নেই বললেই চলে। ভোক্তাদের প্রয়োজন আর চাহিদা বুঝে ফার্মেসি মালিকদের অনেকে প্রায় নিয়মিতই ওষুধের অযৌক্তিক দাম আদায় করছেন। বিশেষ করে মৌসুমি অসুখ-বিসুখ,নানাবিধ অসুখে ঔষধের চাহিদা বেশি। হৃদরোগ, ক্যান্সার সহ জটিল শারীরিক সমস্যায় ব্যবহৃত বিদেশি উচ্চমূল্যের ঔষধের দাম নেয়া হচ্ছে ইচ্ছেমত।

অ্যাজমার ইনহেলারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দাম রাখা হয়। এদিকে কোম্পানিগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ওষুধ বিপণন এখন ‘মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ’ নির্ভর হয়ে পড়েছে। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভরা দোকানিকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে নিজেদের ঔষধ বাজারজাত করতে তৎপর থাকে। ফলে বাকিতে ঔষধ রেখে বিক্রি করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। ওষুধ প্রশাসনে জনবল সংকটের কারণে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ, ভেজাল ও নাম সর্বস্ব ঔষধ কেনা-বেচা। অনেক ক্ষেত্রে ফুড সাপ্লি¬মেন্ট বিক্রি করেও জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে দেদারচ্ছে। চলতিমাসে শেরপুর উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির মাসিক সভায় বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন শেরপুরে ঔষধের বাজার তথা উপজেলা ড্রাগিষ্ট এন্ড কেমিষ্ট সমিতি’র একটি বিশেষ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করায় জনমনে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা বলেন বিশ্ব জুড়ে যখন মুক্তবাজার অর্থনীতির জয়জয়কার অবস্থা তখন শেরপুরে ঔষধের বাজার ১টি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করছে।

ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ঔষধ বিক্রি বন্ধ এবং ঔষধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সারা দেশের ঔষধের দোকানগুলো আধুনিক করার উদ্যোগ নিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই উদ্যোগ সফল হলে মানুষের মানসম্পন্ন ঔষধ পাওয়ার এবং ঔষধের যৌক্তিক ব্যবহারের সুযোগ বাড়বে। জাতীয় ঔষধনীতিতে উল্লেখ করা ৩৯টি ঔষধ ছাড়া কোনো ঔষধ ব্যবস্থাপত্রবিহীন বিক্রি করা যাবে না। দোকানের ভেতরের তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিশেষ ঔষধ বা টিকা রাখার জন্য দোকানে ফ্রিজ থাকতে হবে। ঔষধের দোকানে খাদ্যসামগ্রী রাখা যাবে না। সঠিকভাবে ঔষধ ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব রাখতে হবে। নিবন্ধনহীন ঔষধ, সরকারি ঔষধ ও চিকিৎসককে দেওয়া কোম্পানির নমুনা ঔষধ বিক্রি করা দন্ডনীয় অপরাধ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ডিগ্রিধারী ফার্মাসিষ্ট রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগীকে দেওয়ার আগে ঔষধের মেয়াদ দেখা, ঔষধ দেওয়ার সময় সেবনবিধি বুঝিয়ে বলা। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোগীকে তথ্য ও পরামর্শ দেবেন। এতে ঔষধের সঠিক ব্যবহারের নিশ্চয়তা বাড়বে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার কমবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন চলতি মাসে উপজেলা পরিষদ হলরুমে এক সভায় শেরপুর উপজেলা কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির নেতৃবৃন্দকে জনমনে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দূর করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের কথা বলা হয়েছে। তারা যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে প্রশাসন ফার্মেসী আইন ও ঔষধ নীতিমালা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে।

মন্তব্য

মন্তব্য





এই ধরনের আরও খবর

ফেসবুকে আমরা




Theme Created By ThemesDealer.Com