Logo




বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন যৌন ব্যবসায়ী ফুয়াদের অপরাধ জগতের নিষিদ্ধ কাহিনী

প্রতিবেদকের নাম :
আপডেট করা হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৭

রুমের ভেতর গোপন ক্যামেরা বসিয়ে যৌন সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে বান্ধবীসহ অনেক সুন্দরী মডেলকেই দিনের পর দিন বিছানায় এনেছেন। অনেক মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন। প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুন্দরীদের সঙ্গে দেহলীলা করা ছিল তার নেশা। নেশা বললে ভুল হবে, এটি ছিল তার পেশাও।

একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে অবশেষে ফুয়াদ (৩৩) নামের সেই নারীখেকো যুবককে গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার পুরো নাম ফুয়াদ বিন সুলতান (৩৩)। বাবা মৃত. সুলতান আহমেদ পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

গ্রেফতারের পর র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই ফুয়াদ নিজের জীবনযাপন সম্পর্কে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসা থেকেই বেশ কিছু অশ্লীল পর্নো সিডি, গোপন ক্যামেরা ও এডিটিংয়ের কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

জিজ্ঞাসাবাদের পর র‌্যাব বলছে, শুধু বান্ধবীই নয়, পেশাদার সুন্দরী যৌন কর্মীদেরও তিনি অর্থের বিনিময়ে বিছানায় ডেকে নিতেন। তারপর গোপনে সেক্স ভিডিও ধারণ ও ব্ল্যাকমেইল। যৌনসঙ্গী সরবরাহ করার একটি বিশেষায়িত ওয়েব সাইটও ছিল তার। ওই সাইটে প্রবেশ করতে হতো ডলার খরচ করে।

ওই ওয়েব সাইটটিতে দেওয়া সুন্দরী মেয়েদের ছবি দেখে পছন্দ হওয়ার পর রেট অনুযায়ী সরবরাহ করা হতো। তবে ভেন্যু ছিল তার নিজের দুটি ফ্ল্যাট।

এ ব্যাপরে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ফুয়াদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন এমন অনেক ব্যক্তির সেক্স দৃশ্য ধারণ করে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। অনেকের দৃশ্য তিনি ইন্টারনেটেও ছেড়ে দিয়েছিলেন। আবার অনেকগুলো ভিডিও দিয়ে তিনি তৈরি করেছেন পর্নো ছবি। অর্থের বিনিময়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সাইটে ওই ভিডিও উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতেন তিনি।’

একাধিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি চালানোর পর বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হয়েই ফুয়াদকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ফুয়াদ রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স পাস করার পর শুরুতে কয়েকটি দেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনেক মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে আসছিলেন। হঠাৎ করে চাকরি ছেড়ে দিয়ে যৌন ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ে জড়িয়ে পড়েন।

২০১১ সালের শুরুতে উত্তরা এলাকায় বাসা ভাড়া করে যৌন কাজের জন্য ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া দিতেন। ২০১৪ সালের দিকে তিনি ইন্টারনেটের ব্যবসা শুরু করেন। ওই সময়ই তিনি তার যৌন নেশাকে পেশায় পরিণত করেন। বিভিন্ন সময় ধারণ করা ভিডিও এডিট করে টার্গেটকৃত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের অর্থ। আবার অনেক ভুক্তভোগীকে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে খদ্দেরদের মনোরঞ্জন করাতেন।

২০১৬ সালে ২টি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি পর্নোগ্রাফির ব্যবসা শুরু করেন। এই দুটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি বিভিন্নভাবে সংগৃহীত মেয়েদের আপত্তিকর ছবি, মোবাইল নম্বর এবং দৈহিক মিলনের বিনিময়ে নির্ধারিত মূল্য উল্লেখ করে বিভিন্ন জনকে আকৃষ্ট করতেন। বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে নিজে মুখোশ পরে অশালীন অবস্থায় মেয়েদের পাশে বসিয়ে ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করে তার পর্নো সাইটকে জনপ্রিয় করতেন। তার ফ্ল্যাটে আসা নারী-পুরুষদের ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সরবরাহ করতেন ফুয়াদ।

এদিকে নিজের ফ্ল্যাটে ফুয়াদের এহেন কার্যকলাপ সম্পর্কে তার পরিবারের সদস্যরা কিছুই জানতো না বলে জানা গেছে। ফুয়াদ দুই ফ্ল্যাটের ভাড়া হিসেবে তার মাকে প্রতি মাসে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে আসছিলেন।

তবে জিজ্ঞাসাবাদে ফুয়াদ জানিয়েছে, বাইরের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের লাখো পর্নো সাইট থাকলেও বাংলাদেশে তিনিই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে এ পেশায় জড়িত হয়েছেন।

মন্তব্য

মন্তব্য





এই ধরনের আরও খবর

ফেসবুকে আমরা




Theme Created By ThemesDealer.Com