Logo




সুস্থ গরু চেনার উপায়

প্রতিবেদকের নাম :
আপডেট করা হয়েছে : শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭

তালিবের মাথায় হাত! গতকাল হাট থেকে বড়সর একটা গরু কিনে এনেছেন কোরবানির জন্য। ‘স্বাস্থ্যবান’ গরু দেখে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। কিন্তু ঈদের একদিন আগে একি অবস্থা! গরুটা অসুস্থ হয়ে পড়ছে.. মুখ দিয়ে লালা ঝরছে… এত টাকা দিয়ে এটা কী কিনলেন তালিব!!!

প্রতিবছর কোরবানির ঈদে পশু কেনা হলেও তা যাচাই-বাছাই করার পারদর্শিতা থাকে হাতে গোনা কিছু মানুষের। ফলে কেউ ভালো পশু কিনতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে বাড়তি টাকা গোনেন, কেউ আবার অসাধু বিক্রেতার ফাঁদে পড়ে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা পশু ঘরে আনেন।

কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা পশুগুলো অনেকসময় ঈদের আগেই অসুস্থ হয়ে কোরবানির অযোগ্য হয়ে যায়, কিছু পশু মারাও যায়। ফলে ক্রেতার মাথায় হাত পড়ে।

প্রাণ ডেইরির গ্রুপের পশু চিকিৎসক মোহাম্মদ সিদ্দিক বলেন, “গরু মোটাতাজা করার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিতে ইউরিয়া, চিটাগুড়, খড় মিশিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। মোটাতাজা করতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে। তবে ঈদের বাজারে ভালো দাম পেতে তিন সপ্তাহ থেকে দুই মাসের মধ্যে গরুকে মোটা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেন অনেক ব্যবসায়ী।”

“ওষুধ বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে গরু আসলে মোটাতাজা হয় না। বরং শরীরে পানি জমে যাওয়ার কারণে হৃষ্টপুষ্ট দেখায়। এসব ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য গরুর শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া নষ্ট করে।” বললেন এই পশু চিকিৎসক।

এরকম মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায় সম্পর্কে মোহাম্মদ সিদ্দিক বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে মাংস একটু দেবে যায়। সুস্থ গরুর ক্ষেত্রে এই চাপ ছেড়ে দিলেই মাংস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে কৃত্রিম প্রক্রিয়ার মোটাতাজা করা গরুর গায়ে আঙুলের চাপ দিলে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশি সময় নেবে।”

পরামর্শ দিতে গিয়ে সিদ্দিক আরও বলেন, “পাশাপাশি দেখতে হবে গরু চটপটে কিনা। শরীরে পানি জমার কারণে কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুগুলো এক জায়গায় বসে থাকে, নড়াচড়া কম করে।”

সাধারণত ছাগল বা অন্য পশুর চাইতে গরুর উপরেই এই ধরনের মোটাতাজা প্রক্রিয়া চালানো হয়। তাই এরকম গরু সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য আরও বেশকিছু পদ্ধতি জানান এই পশু-চিকিৎসক।

* ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দেখতে হবে। ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, মনে হয় যেন হাঁপাচ্ছে আর প্রচণ্ড ক্লান্ত দেখায়।

* পাশাপাশি ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর গায়ে পানি জমার কারণে মাংস অত্যান্ত নরম হয়ে যায়। এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেছনের রানের মাংস পরীক্ষা করতে হবে। সুস্থ গরুর রানের মাংস থাকবে শক্ত। আর ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর ক্ষেত্রে তা হবে নরম। এই ধরনের গরুর প্রস্রাবের পরিমাণও কমে যায়।

* হাটের যে চকচকে চামড়ার গরু আপনার নজর কাড়ছে সেই গরুই ট্যাবলেট প্রয়োগ করা গরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মানুষের শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে বা পানি জমলে সেই অংশের ত্বক যেমন চকচক করে, ট্যাবলেট খাইয়ে মোটা করা গরুগুলোও তেমনি চকচকে হয়।

তাই গরুর স্বাভাবিক উশকোখুশকো চেহারা, চামড়ার উপর দিয়ে পাঁজরের কয়েকটা হাড় বোঝা যাচ্ছে এমনটা দেখেই কেনা উচিৎ।

ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর আরেকটি লক্ষণ হল মুখে অতিরিক্ত লালা বা ফেনা থাকা।

মানুষের উপর কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মাংসের প্রভাব বিষয়ে জানালেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সের মেডিসিন বিভাগের পরামর্শদাতা ডা. কামরুল হাসান (বিসিএস স্বাস্থ্য)।

তিনি বলেন, “গরুর উপর স্টেরয়েড ট্যাবলেটের যে প্রভাব পড়ে, ওই গরুর মাংস খেলে আমাদের শরীরেও একই প্রভাব দেখা যায়। এর মধ্যে আছে শরীরে পানি জমে যাওয়া, মূত্রনালী ও যকৃতের বিভিন্ন সমস্যা, চামড়া পাতলা হয়ে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।”

“তবে কোরবানির কয়েকদিন এই মাংস খেলেই যে অসুস্থ হয়ে যাবেন তা নয়। শরীর যদি সুস্থ থাকে তাহলে হয়ত ধাক্কাটা সামলে নিতে পারবে। তবে যাদের আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।” বললেন এই চিকিৎসক।

তাই মানুষের ‘বাহবা’ পাওয়ার জন্য মোটা গরু সংগ্রহ করার চাইতে দেখে-শুনে ভালো ও সুস্থ পশু কেনার চেষ্টা করাই শ্রেয়।

মন্তব্য

মন্তব্য





এই ধরনের আরও খবর

ফেসবুকে আমরা




Theme Created By ThemesDealer.Com