বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউবে জাদু দেখাতেন। জাদু দেখিয়ে বলতেন, তিনি হাত দিয়ে জিন ধরতে পারেন। জিনকে বোতলে ভরতে পারেন। শুধু তা–ই নয়, মাথায় বাতি জ্বালানো, খালি হাতে মোমবাতি জ্বালানো দেখিয়ে দাবি করতেন, অতিমানবীয় ক্ষমতার অধিকারী তিনি। এই ক্ষমতা দিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান করতেন তিনি। লটারি জেতাতে পারেন, খেলার আগাম ফলাফলও বলতে পারেন তিনি। তাঁর পরিচিতি ছিল ‘টেরট বাবা’। এই টেরট বাবা সমস্যার সমাধানের কথা বলে ‘চিকিৎসা’ করতেন। ক্যানসার, পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের ভালো করার কথাও বলতেন তিনি। এসব চিকিৎসা করার নামে ‘টেরট বাবা’ হাতিয়ে নিতেন অর্থ।
‘টেরট বাবা’র প্রকৃত নাম এম এম জাহাঙ্গীর রেজা ওরফে রাদবি রেজা। বাড়ি তাঁর সুনামগঞ্জে। উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন ইংল্যান্ডে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট।
আজ শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম। রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এই ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে এবিসি রেডিওতে প্যারানরমাল রিসার্চার হিসেবে যুক্ত হন রাদবি রেজা। রেডিও চ্যানেলটিতে ভৌতিক পর্ব নিয়ে অনুষ্ঠান ‘ডর’ প্রচারিত হতো। কিন্তু রাদবি রেজা যোগ দেওয়ার পর অনুষ্ঠানটিতে মানুষের নানা সমস্যা সমাধান পর্ব ‘টেরট কার্ড সেগমেন্ট’ প্রচার শুরু হয়। নাম ও ফোন নম্বর দিয়ে সাধারণ মানুষকে এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হতো। এই নাম-পরিচয় অনুযায়ী ফেসবুকে সার্চ করে আগেই আগ্রহী শ্রোতার ব্যক্তিগত তথ্য জেনে নিতেন রাদবি রেজা। পরে যখন তাঁর সঙ্গে দেখা হতো, তখন আগ্রহী মানুষ সম্পর্কে আগেভাগে অনেক তথ্য বলে ফেলতেন তিনি। এবিসি রেডিওতে অনুষ্ঠান প্রচার হওয়ায় অনেক সরল মানুষ রাদবি রেজার ভক্ত হয়ে যান। অনেকে তাঁকে অতিমানবীয় ব্যক্তি ভাবতে লাগলেন। এভাবে এক নারী রাদবি রেজার ভক্ত হন। ওই নারীর সাংসারিক সমস্যা সমাধানের জন্য স্বপ্নে পাওয়া মুক্তাসহ আতর, আংটির প্রয়োজন হবে বলে জানান ‘টেরট বাবা’ রেজা। এসব জিনিস দেওয়া কথা বলে ওই নারীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাদবি রেজা। তাঁকে এ কাজে সহায়তা করতেন এবিসি রেডিওর সাবেক আরজে কিবরিয়া সরকার।
রাদবি রেজা ইউটিউব ও ফেসবুকেও জাদু দেখিয়ে অনেক মানুষকে ফাঁদে ফেলেন বলে জানান মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে জিনের ভয় দেখিয়ে টাকাসহ বিভিন্ন সুযোগ দাবি করতেন রাদবি রেজা। নিজের একটি ওয়েবসাইট ও একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আছে, যা সরকার অনুমোদিত বলে দাবি করতেন রাদবি রেজা। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে দেখা করতে হলে দুই ঘণ্টায় ২০ হাজার ৪০০ টাকা নিতেন তিনি। এই টাকা বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম নিতেন তিনি।
যাত্রাবাড়ী থানার দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০১৩)–এর ৫৭ ধারায় দায়ের করা একটি মামলায় রাদবি রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত দুদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন বলে জানান মোল্লা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতারণাসহ আরও অনেক অপরাধ করেছেন রাদবি রেজা। তাঁকে ২০টি চোরাই মোটরসাইকেলসহ ২০১২ সালের ১৪ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে শেরেবাংলা নগর থানা-পুলিশ।
প্রতারণা বিষয় ধরার পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাদবি রেজাকে ডর অনুষ্ঠান থেকে বাদ দেওয়া হয় বলে জানান এবিসি রেডিও হেড অব অপারেশন এহসানুল হক টিটু। তিনি বলেন, রাদবি রেজা ডর অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্ত হতেন। তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ জানার পরপরই বাদ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরজে কিবরিয়াও গত ডিসেম্বর মাসে এবিসি রেডিওর চাকরি ছেড়ে অন্য রেডিও চ্যানেলে যোগ দিয়েছেন।