মাসুম হোসেন, স্টাফ রিপোর্টারঃ মাটি ও বালি ব্যবসায়ীদের কারণে বগুড়ার শাজাহানপুরে একের পর এক ধ্বংস হচ্ছে উর্বর কৃষি জমি। আর এসব মাটি-বালি পরিবহণে নিয়োজিত লক্কর-ঝক্কর ট্রাকের দাপাদাপিতে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তা। বাড়ছে জনদুর্ভোগ, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। গণমাধ্যমে এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে মাঠে নেমেছে শাজাহানপুর উপজেলা প্রশাসন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ও গত বুধবার এই দুই দিনে মাটি-বালি পরিবহণের দায়ে ৪ জন ট্রাক মালিকের দেড় লাখ টাকা জরিমান করা হয়েছে। আর প্রশাসনের এমন কঠোর অবস্থানে মাটি ও বালি দস্যুদের ভিত কেঁপে উঠেছে। পরিস্থিতি সামলাতে তারা নানা রকম ফঁন্দি-ফিকির আটছে। জানাগেছে, গত বুধবার উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের দুরুলিয়া এলাকা থেকে মাটি পরিবহণকারী দু’টি ট্রাক আটক করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: কামরুজ্জামান। তাকে সহায়তা করেন শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম। পরে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ১৫(১) ধারা মোতাবেক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ট্রাক দু’টি মালিক সুজাবাদ দহপাড়া গ্রামের পরিতোষ চন্দ্র রায় ও সুজন মজুমদারের নিকট থেকে ৫০ হাজার এবং একই এলাকার রেজওয়ান হোসেনের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। এরপর গতকাল সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা গ্রামে অভিযান চালিয়ে অত্যন্ত গভীর (২০-২৫ ফুট) করে মাটি খননের অপরাধে ১টি এক্স-ক্লে ভেটর (মাটি খননের মেশিন), ১টি ট্রাক ও ১টি শ্যলো মেশিন আটক করে উপজেলা প্রশাসন। পরে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: মাছুদুর রহমান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে মাটি কাটার সরঞ্জামাদির মালিক মোকছেদুল ওরফে মতিনের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ভ্রমরকুটি গ্রামের রংমিস্ত্রি মন্তেজার রহমানের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৫২) জানিয়েছেন, তার বাপ-দাদার মালিকানাধীন ৩ একর ৯১ শতাংশ সম্পত্তি ভূঁয়া কাগজপত্র তৈরি করে কতিপয় ব্যক্তি ভোগ দখল করছেন। জমির দখল পেতে তিনি ২০০৭ সালে আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি রায় পেয়েছিলেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীগণের আপীল চলমান আছে। মামলার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া সত্বেও নালিশী সম্পত্তির অর্ন্তভূক্ত একখন্ড জমি থেকে গত দু’বছর যাবত দেদারসে মাটি-বালি বিক্রি করছে প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী লোকজন। গভীর করে মাটি কাটতে গিয়ে গত বছর আব্দুস সামাদ (৫০) নামের এক দিনমজুরের উপড় মাটি ধ্বসে পড়লে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। তারপর কিছুদিন মাটি কাটা বন্ধ থাকলেও পুন:রায় শুরু হয় মাটি কাটা। এতে আশপাশের বসতবাড়ি, ফসলি জমি, সরকারি রাস্তা হুমকির মুখে পড়লেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ অভিযোগ করা সহাস পায় না। শুধু ভ্রমরকুটি গ্রামে নয়, উপজেলার সর্বত্রই চলছে মাটি-বালি ব্যবসায়ীদের এমন অনৈতিক কর্মকান্ড। মাটি-বালি ব্যবাসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসানিক অভিযান অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, মাটি খননের ফলে যদি কৃষি জমি, বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সেটা বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ অনুযায়ী শাস্তিমূলক অপরাধ। তাই এমন অপরাধের সংবাদ পাওয়া মাত্রই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের একটানা দু’দিনের অভিযানে মাটি-বালি ব্যবসায়ীদের ভিত কেঁপে উঠেছে। এতে অসহায় নিরীহ মানুষ গুলো সুশাসন পাবেন বলে আশান্বিত হয়েছেন।