Logo




‘আমার ছেলেকে জেলে দেন ওর অত্যাচার আর সহ্য হচ্ছে না’

প্রতিবেদকের নাম :
আপডেট করা হয়েছে : রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মাসুম হোসেন, স্টাফ রিপোর্টার: ‘ছেলেকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে, তাকে খুব আদর করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাকে আমার কাছে আসতে দেয় না। জিডনির মা তাকে সঙ্গে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে চলে গেছে। আমার খোঁজ রাখার কেউ নেই। নি:সঙ্গতায় মৃত্যুর অপেক্ষায় আমার সময় কাটছে।’
উপরের কথাগুলো উপজেলার বনানী এলাকার ফয়সাল ওয়াহিদ নামে এক পিতার। এক সময় তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। হিরোইন সেবন করতেন ও ড্রাগস নিতেন। এরপর ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সময়গুলোই তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কর্মস্থলেই বেশীদিন কাজ করতে পারেননি তিনি। সংসারে সবসময় ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। একপর্যায়ে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। সঙ্গে শিশু সন্তানকেও নিয়ে গেছে। দুই বছর হয়ে গেল তবুও সন্তানকে নিয়ে ফিরে আসেননি তার স্ত্রী। তবে এখন তার দাবি তিনি নেশা করা ছেড়ে দিয়েছেন।
একই এলাকার মাদকাসক্ত রায়হান শেখ। একপর্যায়ে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। অনেক আগেই গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে তার স্ত্রী। তবে এ আত্বহত্যাকে তার ছেলে রকিসহ এলাকাবাসীরা রহস্যজনক মৃত্যু বলে দাবী করেছে। রায়হানের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। বাড়ির জায়গা বিক্রি করে রায়হান এখন পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। কখনো বনানী বস্তিতে আবার কখনোও অন্যর বাড়িতে রাত কাটান তিনি। আর তার দুই ছেলে রকি ও রনি। তারাও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, নেই নিদিষ্ট বাসস্থান। কখনও রিক্সাচালক আবার কখনও অন্যর রিক্সা-ভ্যানের গ্যারেজ দেখাশোনা করছে তারা।
উপজেলার সাজাপুর জায়দারপাড়া গ্রামের বাদশা মিয়ার মাদকাসক্ত ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ের অভিযোগও রয়েছে। স্ত্রীকে মারধর ও কোন কাজকর্ম না করায় প্রায় ৬ মাস আগে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে আনোয়ারুল পাগলের মতো ঘুরে বেড়ায় বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।
আরেক মাদকাসক্ত জাহাঙ্গীরাবাদ ফুলতলা এলাকার সোহাগ হোসেন। তাকে এলাকায় সোহাগ চোর নামে সবাই জানে। তার বাবা সরকারি কর্মচারি ছিলেন। এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় তার নামের সঙ্গে চোর শব্দটি লেগে গেছে। বাবা-মায়ের সামনে হেরোইন সেবন করতেও দ্বিধাবোধ করেন না তিনি। টাকা না পেলে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করেন। চোখের সামনে সন্তান মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে তবুও নিরুপায় বাবা-মা। তার মা জানান ‘একদিন নেশা ছেড়ে ভালো হয়ে যাবে সোহাগ। আর দশজনের মত স্বাভাবিক জীবন-যাপন করবে সে।’
একই এলাকার মাদকাসক্ত আমজাদ হোসেন। নেশার টাকা না পেলে বাবা-মাকে মারধর করে। মা অন্যর বাড়িতে কাজ করে আর বাবা দিনমজুরের কাজ করে। চাহিদামত টাকা দিতে পারেনা আমজাদকে তারা। টাকার জন্য চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পরে সে। মারধর করায় তাকে ছেড়ে চলে গেছে তার স্ত্রী। মাঝে মাঝেই এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে আমজাদের মা বলেন, ‘ আমার ছেলেকে জেলে দেন, ওর অত্যাচার আর সহ্য হচ্ছে না’ ।

মন্তব্য

মন্তব্য





এই ধরনের আরও খবর

ফেসবুকে আমরা




Theme Created By ThemesDealer.Com