স্টাফ রিপোর্টার: বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের গয়নাকুড়ি নামক হিন্দুপাড়া গ্রামে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে বিনদ কুমার নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটির সত্যতা না পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা অভিযুক্ত বিনদকে এজাহার থেকে অব্যাহতি দেয়। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে এজাহারের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করা হয়। এছাড়াও বিনদ চন্দ্রের বিরুদ্ধে আরেকটি বাড়ি ভাংচুরের মামলাও করা হয়েছে। এই মামলাটিকেও সাজানো মামলা বলছেন অভিযুক্ত বিনদসহ একাধিক গ্রামবাসি।
এই দুটি মামলাই ওই গ্রামের অক্ষয় চন্দ্র নামে এক ব্যাক্তি তার স্ত্রী ও মেয়েকে দিয়ে করিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিনদ চন্দ্র জানান, তার বাবা বিপিন চন্দ্র ১৯৮২ সালে গয়নাকুড়ি গ্রামের অক্ষয় চন্দ্রের বাড়ির পাশে ৫ শতক জমি ক্রয় করে ভোগ দখল করে আসছে। তাদের জমিতে টিউবওয়েল বসানোর জন্য তার বাবা বিপিন চন্দ্রের কাছে অনুমতি চায় অক্ষয় চন্দ্র। মানবিক কারণে তার বাবা অক্ষয় চন্দ্রকে টিউবওয়েল বসানোর অনুমতি দেয়। অক্ষয় চন্দ্র টিউবওয়েল বসানোর পরে সেখানে চুলা পাড় বানালেও তার বাবা আপত্তি করেননি। কিন্তু এরপর চুলার পাড়ে দেয়াল দিয়ে ছাউনি তুলতে গেলে অক্ষয়কে বাধা দেয়া হয়েছিলো। বর্তমানে অক্ষয় চন্দ্র পুরো ৫ শতক জায়গায় দখলে নিয়েছে। সেখানে গেলে মিথ্যা মামলা দেওয়ার ভয় দেখায় অক্ষয়। এ বিষয়ে গত বছরের জুলাই মাসে তার বাবা বিপিন চন্দ্র বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু এর পরপরই গত বছরের জুলাই মাসেই তাকেসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাসহ বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের মিথ্যা মামলা করা হয়। ভাংচুরের মামলায় অক্ষয়ের স্ত্রী কিরণ বালা বাদী ও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় অক্ষয়ের মেয়ে বাদী হয়েছে। তবে নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় এজাহার থেকে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফারুক হোসেন তাকে অব্যাহতি দেয়। কিন্তু বাদী নারাজির আবেদন করেছে।
অক্ষয় চন্দ্র দাবী করেন, এই ৫ শতক জায়গাটি সরকারি খাস জমি। দীর্ঘবছর যাবৎ তিনি ভোগদখল করে আসছেন।
মিথ্যা মামলা দায়েরের বিষয়ে অক্ষয় বলেন, তার মেয়ে ও স্ত্রীকে দিয়ে কোন মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়নি। এই জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রায় ৭ মাস যাবৎ তাকে গ্রামবাসি একঘরে করে রেখেছে।
ওই গ্রামের এক মাতব্বর গোপাল চন্দ্র প্রামাণিক জানান, অক্ষয় চন্দ্রকে একঘরে করে রাখা হয়নি। তাকে অনেকবার ডাকা হয়েছে সে আমাদের সঙ্গে আসে না। এমনকি দূর্গা পূজার সময়ও সে আমাদের সঙ্গে পূজায় অংশ নেয়নি। এতে আমাদরে কিছু করার নেই।
সরেজমিনে গয়নাকুড়ি গ্রামে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলা হলে তারা জানান, অক্ষয় চন্দ্রের পরিবারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তারা। তার স্ত্রী ও মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করে উদ্দেশ্য হাসিল করার চেষ্টা করছেন অক্ষয়। এছাড়াও অক্ষয় চন্দ্র তাদের সঙ্গে সবসময় ঝগড়া-বিবাদে জড়াতে চায়। ধর্মীয় উৎসবে তাকে ডাকা হলেও তিনি আসেন না। তিনি দাবী করেন তার মতানুযায়ী গ্রামের সবকিছু পরিচালনা করতে হবে। তবে অক্ষয় চন্দ্র এসব দাবীগুলো করছেন গ্রামের বিপিন চন্দ্রের সঙ্গে জায়গা নিয়ে বিরোধের পর থেকে।
এদিকে অক্ষয়ের মেয়ের দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার সর্বপ্রথম তদন্ত করেন শাজাহানপুর থানার এসআই মাসুদ রানা। তিনি জানিয়েছেন, এটি একটি মিথ্যা অভিযোগ। অক্ষয় তার বাড়ির সামনে ৫ শতক জায়গা দখলে নিতে পরিকল্পিতভাবে অভিযোগটি দায়ের করায়।
এরপর এই মামলাটির তদন্ত করেন জেলা ডিবি পুলিশের এসআই ফারুক হোসেন। তিনি মুঠোফোনে জানিয়েছেন, অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় বিনদ চন্দ্রকে এজাহার থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।