ডেস্ক নিউজ: করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সেই ব্যক্তির লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জ্বর ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য তাঁর স্ত্রী রাতভর আকুতি জানালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। বিষয়টি আলোচনার জন্ম দেয়।
উপজেলা প্রশাসন প্রথমে ওই ব্যক্তিকে একই এলাকায় দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু এলাকাবাসী তাতে বাধা দেন। এ অবস্থায় খানিকটা দূরে সরকারি মালিকানাধীন পীরের মাজারের পাশে দাফনের চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু তাতেও বাধা দিচ্ছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজবাউল হোসেন এবং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি–সমর্থিত সাবেক ইউপি সদস্য সুজাউদ্দোলা।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম রূপম বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন খাস শ্রেণিভুক্ত একটি মাজারের পাশে ওই ব্যক্তিকে দাফনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেখানে কবর খোঁড়ার কাজে বাধা আসায় আমরা এখন লাশ নিয়ে বিপাকে পড়েছি।’
মেজবাউল হোসেন লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যে বাড়িতে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন, তার আশপাশে অনেক কবরস্থান রয়েছে। পাশেই করতোয়া নদীপাড় রয়েছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ইচ্ছা করেই প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে পীরের মাজারে কবর দিতে চাইছেন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, কোনোভাবেই তাঁরা অন্য এলাকার মানুষকে এখানে কবর দিতে দেবেন না। এলাকাবাসীর দাবির মুখে তাঁরা এখানে কবর খুঁড়তে নিষেধ করেছেন।
শিবগঞ্জ ইউএনও আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠিয়েছে। পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখার পাশাপাশি আশপাশে ১০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এরপর দাফনের উদ্যোগ নেওয়া হলে কেউ করোনা আতঙ্কে লাশ স্পর্শ করতে রাজি হয়নি। অনেক অনুরোধের পর অন্য এলাকার দুজন ব্যক্তিকে রাজি করানো হয়। কিন্তু লাশ দাফনের জন্য কবর খুঁড়তে গেলে প্রথমে স্থানীয় লোকজন বাধা দেন। শেষে বাধ্য হয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর খানিকটা দূরে খাস সম্পত্তির একটি কবরস্থান নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেখানেও এলাকাবাসী কবর খুঁড়তে বাধা দিচ্ছেন। ওই ব্যক্তির বাড়ি অন্য উপজেলায় হওয়ায় সেখানেও নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার স্ত্রী ছাড়া তাঁর পরিবারের অন্য কেউ যোগাযোগও করছেন না।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বাড়ি বগুড়ার কাহালু উপজেলায়। একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত তাঁর স্ত্রী। তাঁর কর্মস্থলের সুবাদে তিনি গাজীপুরে থাকতেন। সেখান থেকে শিবগঞ্জ উপজেলায় এসেছিলেন। প্রচণ্ড জ্বরে অচেতন, হাসপাতালে নেওয়ার ডাকে প্রতিবেশীদের সাড়া না দেওয়া, অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাতভর স্ত্রীর চেষ্টা, একের পর এক হটলাইনে ফোন করে বিফল—সবকিছুকে পেছনে ফেলে তিনি আজ শনিবার সকালে মারা যান।
বগুড়ার সিভিল সার্জন গউসুল আজিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের একজন মেডিকেল টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সযোগে আজ বিকেলে ওই ব্যক্তির নমুনা ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। যেখানে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন, লাশ ওই এলাকাতেই দাফনের জন্য ব্যবস্থা নিতে সেখানকার উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রথম আলো