বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রায় ২মিনিটের ব্যবধানে বেঁচে গেল ৭টি প্রাণ। আকষ্মিক ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছই এখন তাদের ঘরের ছাউনী।মঙ্গলবার (২৬মে) কালবৈশাখী ঝড়ো হওয়ায় লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে শিবগঞ্জ উপজেলার, হাজার হাজার গাছপালা ও সেই সাথে প্রবল বাতাসে উড়ে গেছে অনেকের ঘরের চালা। উপড়ে পড়েছে বিশাল বড় বড় গাছ।এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা ঘটেছে মোকামতলা ইউনিয়নের আমজানি গ্রামে। দূর্ঘটনাটি ভয়াবহ হলেও কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার রাত ১১টায় ওই গ্রামের সাদেক আলী (প্রোং) তার পরিবারের ৭সদস্য নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে অন্যান্য দিনের মত সুয়ে পড়েন। এসময় রাতে হুংকার দিয়ে ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। প্রবল ঝড়ে বাড়ীর চারপাশের সব কিছু যেনো ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় পরিবারের সবাই কালেমা পড়তে থাকেন। তাদের বাড়ীর সামনে আমজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বিশাল বড় শতবর্ষী পাইকড় গাছ তখন ঘূর্ণি ঝড়ে দুলতে থাকে। এসময় ঘরে থাকা নিরাপদ নয় ভেবে বৃদ্ধ সাদেক আলী চিৎকার দিয়ে বাড়ীর সবাইকে বের করে গোয়াল ঘরে নিয়ে যায়। তারা গোয়াল ঘরে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় ২মিনিট পর শতবর্ষী বিশাল আয়তনের এই পাইকড় গাছটি উপড়ে তাদের বসতবাড়ীর ৫টি রুমে পড়ে যায়। এতে ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। ঘরে থাকা আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র, ধান, চাল চাপা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এঘটনায় আহত হয় বৃদ্ধ সাদেক ও তার স্ত্রী, ছেলে মামুনুর রশিদ।এলাকাবাসী জানান, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঝড় এবং বাতাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে বিশাল প্রাকৃতিক এই পাইকড় গাছটি উপড়ে যায়। বাতাস এতটায় প্রবল ছিল যে, কয়েক মিনিটেই বিশালাকৃতির এই গাছ উপড়ে ভেঙে মামুনুর রশিদের বাড়ী ঘরের উপর পড়ে যায়। এতে দুমড়ে মুচরে যায় প্রায় ৫টি বসতঘর।
ওই এলাকার এ. হোসাইন রানা নামের এক শিক্ষক জানান, মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশেপাশের প্রতিবেশীদের চিৎকারে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কালের স্বাক্ষী বড় পাইকড় গাছটি বাড়ীর উপর পড়ে আছে। অনেকেই ভেবে ছিল কেউ বেচেঁ নেই। বিদ্যুৎ বিছিন্ন অন্ধকারে জরাজীর্ণ। এর ভিতর আবার কেউ কেউ লাশ খুঁজতে থাকে। এক সময় তাদের একটি গোয়াল ঘর থেকে মই দিয়ে টপকিয়ে উদ্ধার করা হয়।গাছ পড়ে ধ্বংস বিশেষ ঘরগুলো থেকে তাদের একটি পড়ের কাঁপড়- চুপড় পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। বর্তমান ঘরবাড়ী হারিয়ে পরিবারটি পাশের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এলাকার অনেকেই মানবিক সহায়তায় খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত অসহায় নিঃস্ব পরিবারটি সরকারের সাহায্যের আসায় পথ চেয়ে আছেন।এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবিরের সাথে কথা বললে, তিনি জানান, ঘুর্ণিঝড়ে বিশাল একটি গাছ মোকামতলা ইউনিয়নের আমজানি গ্রামে একটি বাড়ীর ওপর উপড়ে পড়েছে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিস পাঠানো হয়েছে। কিন্তু গাছটি বিশালাকৃতির হওয়াই এটি সারানো সম্ভব হয়নি। যেহেতু এটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি গাছ। তাই বনবিভাগের সাথে কথা বলা হয়েছে। তারা দ্রুত গাছটি অপসরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ইউএনও আলমগীর কবির আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।