বগুড়ায় আকষ্মিক কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে ঘরবাড়ী ও গাছপালা। ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যরাতে শো’ শো’ শব্দ আর সেই সাথে বজ্রধ্বনি সবাইকে আতঙ্কিত করে। শব্দ শুনে মনে হয় এ যেন সমুদ্রের ঢেউ! একের পর এক ঝড় ধেয়ে আসে। আমফান ঘূর্ণিঝড়ের রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার দিন গতরাতে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হলো উত্তরবঙ্গের বগুড়া জেলা। মঙ্গলবার রাতে বগুড়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্যাপক ঝড়, বৃষ্টি হয় অঝোরধারায়। এই ঝড়ের দাপটে বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলা এলাকার মানুষ। এছাড়া আকষ্মিক এই ঝড়ে শিবগঞ্জ উপজেলার আমজানি গ্রামে স্কুল মাঠের পাইকড় গাছ উপড়ে ৪টি ঘরের উপর পড়ে তছনছ হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে ১জন আহত হলেও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় পরিবারের সবাই।ঝড়ে উপজেলার রায়নগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সন্নিকটে থাকা বহু বছরের একটি পাইকড় গাছের ডাল ভেঙে অফিসটি দুমড়ে মুচড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাতে খবর পেয়ে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবির ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় জরুরি রেকর্ড কাগজপত্র অপসারণ করেন।ঝড়ে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার ভূরঘাটা নামক গ্রামের মঞ্জু মিয়ার একটি লম্বু গাছ ভেঙ্গে তার বাড়ীর উপরে পরে ভেঙ্গে গেছে তার বসতবাড়ী। উপজেলার শব্দলদিঘী বালিকা দাখিল মাদ্রাসার টিনের ছাউনী উড়িয়ে নিয়ে গেছে এবং শীলাবৃষ্টিতে টিনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।নামুজা পল্লীবিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্রের বিলহামলা এলাকা নামক স্থানে ঝড়ে বিদ্যুতের ত্যাঁড়ে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ বিছিন্ন হয়ে যায়।উপজেলার দহিলা গ্রামে একটি বাড়ীর টিনের চালা উড়িয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ঝড়ে পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ড়ের কাউন্সিলর ও ১ নং প্যানেল মেয়র হারুনুর রশিদের বাড়ি ও খামারে গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।ঝড়ে মহাস্থান দক্ষিণপাড়া গ্রামের বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে বৈদ্যুতিক ত্যাঁড়ের উপর পড়ে ২টি বৈদ্যুতিক খুটি হেলে পড়ে যায়। এছাড়া অনেক অসহায় গরীব ব্যক্তিদের টিনের চালা উঠিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউনিয়নের দশটিকা ফিলপাড়া গ্রামে ঝড়ের তাণ্ডবে একটি পাইকড় গাছ বাসতবাড়ীর উপর পড়ে আহত হয়েছে স্বামী স্ত্রী।এদিকে বগুড়ার কাহালুতে ঘূর্ণিঝড়ে গাছ চাপা পড়ে এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে।
আজ বুধবার (২৭ মে) ভোর রাতে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। মধ্যরাতে ঘুর্ণিঝড়ে শুধু যে বসতবাড়ী, গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কিন্তু নয়, ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে প্রান্তিক কৃষকেরা।শীলাবৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে অনেকের জমির ধান জমিতেই পরে রয়েছে।বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক বাড়ি-ঘর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়ে কারো বাড়ির টিন উড়ে গেছে, তো কারো বাড়ির মাটির দেওয়াল ধসে গেছে, আবার কারো বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির মধ্যে কোন কোন পরিবার কোন মতে তাদের সেই ক্ষুদ্র একমাত্র আস্তানা মেরামতে ব্যস্ত। অন্যদিকে অনেক পরিবারই আশ্রয়হীন হয়ে কখনো প্রতিবেশীর বারান্দায় অথবা খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছে। ঘর বাড়ি ভেঙ্গে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত গরীব পরিবারগুলো সরকারি সাহায্যের আশায় পথ চেয়ে আছে।