দীর্ঘ ১১ মাস ধরে একজন নিখোঁজ ব্যক্তির অদম্য ভাবে একটি জিডির সূত্র টানে সোনাতলা পুলিশ। অবেশেষে জেলা পুলিশ সুপার, আলী আশরাফ ভূঞা (বিপিএম) নির্দেশনায় সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে শিবগঞ্জ ও সোনাতলা দায়িত্বরত সার্কেল এএসপি কুদরত ই খুদা শুভ। দীর্ঘ ১১মাস পর খুনি শনাক্তসহ গ্রেফতার ও তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সোনাতলা রেললাইনের পাশ থেকে নৃশংস বীভৎস বস্তাবন্দী লাশের হাড়গোর ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। বগুড়ায় চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় করোনা মুহূর্ত দেশজুড়ে সাফল্যের প্রশাংসায় ভাসছেন জেলা পুলিশ বগুড়ার টিম সোনাতলা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গেল ২০১৯ সালে জুন মাসের শেষে দিকে এক রাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন কৃষক রফিকুল ইসলাম। পরিবারের লোকজন না খোঁজাখুঁজি করলেও তার আপন ভাই শফিকুল বসে থাকেননি। তিনি বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেও তার অবস্থান নিশ্চিত করতে না পেরে
গেল ২০১৯ সালের পহেলা জুলাই সোনাতলা থানায় একটি হারানো জিডি করেন। (জিডি নং ২৫)। সেখানে জুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে সোনাতলা সদর ইউনিয়নের রানিরপাড়া গ্রামের পেশায় কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪৭) নামক এক ব্যক্তি নিখোঁজ মর্মে জিডি করেন নিখোঁজ ব্যক্তির ভাই শফিকুল ইসলাম। যদিও তার স্ত্রী এবং তিনটি সন্তান ছিল। সোনাতলা থানার পাশে প্রবাহিত যমুনা নদী দিয়ে গত ১বছরে অনেক পানি গড়লেও হাল ছাড়েনি টিম সোনাতলা, সার্কেল এএসপি কুদরত-ই খুদা শুভ ও লেগে ছিলেন তদন্ত (ইন্সপেক্টর) জাহিদ।
ঘটনার প্রায় ১বছর পর তারা খুনি ধরার আশাকে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে চলে। প্রথমে গতরাতে সোনাতলা উপজেলার তেকানি চুকাইনগর গ্রামের শাকিল (২২) নামের এক যুবককে আটক করেন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে কিছুটা ইঙ্গিত পেয়ে আটক করা হয় নিখোঁজ ব্যক্তির স্ত্রী রেহানা এবং ছেলে জসিমকে। এরপর গ্রেফতার করা হয় স্ত্রীর গোপন প্রেমিক মুহিদুলকে। মুহিদুল রফিকুলের প্রতিবেশী। পুলিশের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে তারা একপর্যায়ে স্বীকার করে যে মুহিদুল, রফিকুলের বউ রেহানা, ছেলে জসিম এবং রেহানার বোনের ছেলে শাকিল মিলে রফিকুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। ঘাতকেরা শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি। তার মৃতদেহ গুম করতে বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে বগুড়া সোনাতলা রেললাইনের পাশে প্রায় ৩ ফুট গর্ত করে পুঁতে রেখেছিল।
খুনের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, পরকীয়া প্রেমের পথের কাঁটা সরাতেই রফিকুলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে রেহানা এবং পরকিয়া প্রেমিক মুহিদুল। তারা ছেলেকে বাবার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মানসিক ব্ল্যাকমেইল করে তাদের পক্ষে নিয়ে পিতৃহত্যার মতো ঘৃণ্যতম কাজে জড়িত করে মা নামক পাষাণী রেহানা। তাদের ঘটনার কুচক্রে ছেলে শাকিল জড়িয়ে যায়। সবাই মিলে পরামর্শ করে রফিকুল কে হত্যার। এরপর ঘটনার দিন মুহিদুল এবং জসিম ঘুমের ট্যাবলেট এনে রাতের খাবারের সাথে মিশিয়ে রফিকুলকে খাইয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন করে। রাতের এক সময় তাকে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে ৪জনই সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। এরপর শাকিল, মুহিদুল এবং জসিম লাশ ঘাড়ে করে রেললাইনের পাশে খনন করে পুঁতে রাখে। শুক্রবার (২৯মে) আসামীদের লোমহর্ষক বর্ণনায় জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা (বিপিএম) বার এর উপস্থিতিতে উল্লেখ্য রেললাইনের পাশে পানির মধ্য থেকে গলিত মৃতদেহের হাড়গোর ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় আশেপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার নারী-পুরুষ একনজর দেখার জন্য ভীড় করে। এবিষয়ে সার্কেল এএসপি কুদরত-ই খুদা শুভ’র সাথে কথা বললে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, রফিকুল নিখোঁজের বিষয় মাথায় নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে রহস্য উদঘাটনের কাজ করে যাচ্ছি। এটি গত ৭সপ্তাহ হলো আমরা ক্লু বের করতে সক্ষম হই। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকালে লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি আরোও বলেন, সাধারনত রফিকুল কে পরকিয়ার কারণে দলবেঁধে হত্যা করে খুনীরা। খুনীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে।