বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ছোট ভাই পানিতে পড়ে ডুবে গেলে তাকে বাঁচাতে বড়ভাই হলো লাশ। মর্মান্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে বৃহষ্পতিবার অনন্তবালা গ্রামে। শিবগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স ও স্থানীয় লোকজনের দীর্ঘ দেড় ঘন্টার সম্মিলিত প্রচেষ্টার পর বৃহষ্পতিবার (১১জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় ডুবে যাওয়া বড়ভাই এর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত কিশোর সে অন্তবালা রিজু হোসেনের পুত্র এস.এস.সি পরিক্ষার্থী রাহুল (১৭)। শিবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে রাহুল , তার ছোট ভাই রোহান হোসেন (৬)কে সাথে নিয়ে বাড়ির পাশে করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে যায়। নদীতে গিয়ে ছোট ভাইকে কাধে নিয়ে নদী সাঁতরে ওপারে যায়। অন্যান্য দিনের চেয়ে মাছও ধরে অনেক। মাছ ধরে আবারও ছোট ভাইকে কাধে নিয়ে নদী পার হচ্ছিল রাহুল। পারাপারের সময় নদীর ওই স্থানে পানি মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় ছোটভাই তার কাধ থেকে পড়ে যায়। রাহুল তাকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই গভীর পানিতে। তখন রাহুল নিজে ডুবে গেলেও ছোট ভাইকে কিনারায় ছুড়ে দেয়। এতে ছোট ভাই স্থানীয়দের সহায়তায় বাঁচলেও এক পর্যায়ে রাহুল তীব্র স্রোতে নদীর গভীর পানির নিচে তলিয়ে যায়। এসময় তাকে বাঁচাতে একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্থানীয়রা। পরে তার বাড়িতে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়। বাড়ির লোকজন ও এলাকার শত শত মানুষ নদীর ওই গভীর পানির অংশে তাকে উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এলাকাবাসী অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান না পেয়ে শিবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কে খবর দেয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ইনচার্জ কবির উদ্দিনের নেতৃত্বে ৭ জনের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এলাকার অসংখ্য মানুষ। এরপর একজনের পায়ের সাথে লাশ বাজলে সে ভয়ে উপরে ওঠে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা সেখানে তৎপর চালিয়ে তার নিথর মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর তার পরিবারের লোকজন মৃত্যু নিশ্চিত হতে তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার ঠেঙ্গামারা কমিউনিটি রফাতুল্লাহ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের পিতা রিজু বলেন, ছেলে এসএসসি পরিক্ষার্থী রুহুল হোসেন। সখের বসত ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পাশে করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে এই দূর্ঘটনায় মারা যায়।এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে পরে নিহতের কথা নিশ্চিত করেছেন। মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় রায়নগরের অনন্তবালা গ্রামে আশে পাশের এলাকা থেকে হাজারও মানুষ ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে আনলে কান্নার রোল পড়ে যায় পুরো এলাকায়। শোকে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
বাদ আছর নিজ গ্রামে মরহুমের জানাযা নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাযা নামাজে ইমামতি করেন রাহা।এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান আবু সালেহ উদ্দিন মিল্লাদ, তাহেরুল ইসলাম, আজিজার রহমান, তাজুল ইসলাম, ওয়াজির হোসেন তাবীব সনি, আল আমিন, ফাইন ইসলাম, স্বপন মিয়া, তোহা, ফুল মিয়া, কামাল পাশা, শাকিল আহমেদ, ইমরান খান, বাবু মিয়া, সিমেল আহমেদ, শাহ আলম, সাংবাদিক সোহাগ মাহবুব সহ আত্নীয় স্বজন ও এলাকার মুসল্লীবৃন্দ। জানাজা নামাজ শেষে মরহুমের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।
মন্তব্য