বগুড়ার মহাস্থানে একটি সেঁকো না থাকায় হযরত শাহ সুলতান মাজার উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ দানের টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মাজার। জানা যায়, বগুড়ার মহাস্থানগড়ের হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহীসাওয়ার (র.) এর মাজারের দানবাক্স (সিন্দুক) বসানো হয়েছে ৯টি। এর মধ্যে ১টি অকেজো। বাকি ৮টি দানবাক্স সচল রয়েছে। এর মধ্যে মহাস্থান বাসষ্ট্যাণ্ড বন্দের রূপালী ব্যাংকের সামনে ৮ নং দান বাক্সটির সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) রাস্তার পাশ দিয়ে নামে মাত্র ড্রেন নির্মাণ করেন। এই ড্রেন খনন করতে গিয়ে দানবাক্সের ছাউনী পর্যন্ত তারা ভেঙে দেয়। ড্রেনটি মহাসড়ক থেকে এত চওড়া যে কোন মাজার জিয়ারতকারী মুসাল্লিরা দানের টাকা দিতে এসে দূর্ভোগে পড়েন।তারা তাদের দানের টাকা পয়সা দিতে এসে ড্রেন পার হতে পারে না।স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে রাজধানী মুখী সকল যানবাহন থামিয়ে হযরত শাহ সুলতানের মাজারের এই দান বাক্সে মাজার ও মসজিদ উন্নয়ন প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা দান করে থাকেন। শুধু টাকা নয় স্বর্ণালংকার পর্যন্ত দান করা হয়।রাস্তার পাশ দিয়ে খননকাজ করায় দীর্ঘদিন ধরে দান বাক্সটি অযত্ন অবহেলায় যেনো ডাস্টবিন স্তুপে পড়ে আছে। দানবাক্সের উপর কোন ছাউনী নেই। এখন বর্ষাকাল অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দানবাক্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সময় তুমুল বৃষ্টিতে দানবাক্সের টাকা প্রবেশকৃত ছিদ্রপথ দিয়ে পানিও ঢুকতে দেখা যায়।এ বিষয়ে মহাস্থান মাজার কমিটির প্রশাসন কর্মকর্তা জাহেদুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি শুনেছি এ নিয়ে রোড এ্যান্ড হাইওয়ের কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তারা খনন করে দানবাক্সের সামনে ড্রেন করেছে। তিনি আরও জানান দ্রুত দানবাক্সের উপর ছাউনী নির্মাণ করে সামনে একটি সেঁকো দেওয়া হবে।উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯ বগুড়ায় হযরত শাহ্ সুলতান মাহমুদ বলখী (রহ.) মাজারের ৮টি সিন্দুকে চার মাসে ২০ লাখ ৭৭ হাজার ২১৪ টাকা জমা পাওয়া যায়।। প্রায় ১৫/২০ স্কুল ছাত্রদ্বারা এই টাকা গুণতে সময় লেগেছিল ২দিন।ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহ্ সুলতান মাহমুদ মধ্য এশিয়ার বল্লখ রাজ্যের সম্রাট ছিলেন। ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি রাজত্ব ছেড়ে প্রায় ৭০০ বছর আগে পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুণ্ড্রনগর তথা আজকের বগুড়ার মহাস্থানে আসেন। মহাস্থানগড়ে পৌঁছে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। প্রথমে পুণ্ড্রবর্ধনের তৎকালীন অত্যাচারী রাজা পরশুরামের সেনাপ্রধান, মন্ত্রী এবং কিছু সাধারণ মানুষ ইসলামের বার্তা গ্রহণ করে মুসলিম হন।
এভাবে পুণ্ড্রবর্ধনের মানুষ হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকলে রাজা পরশুরামের সাথে শাহ সুলতানের বিরোধ বাধে এবং এক সময় যুদ্ধ শুরু হয়। ১৩৪৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি পুণ্ড্রবর্ধনের শেষ রাজা পরশুরামকে যুদ্ধে পরাজিত করে ইসলামের পতাকা উড়ান। পরে তিনি মৃত্যুবরণ করলে মহাস্থানে তার মাজার নির্মিত হয়। প্রতি বছর বাংলা বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার শাহ্ সুলতান মাহমুদ বলখীর (রহ.) ওরস মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তার কবর জিয়ারত করলে সওয়াব পাওয়া যাবে এই আশা নিয়ে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান তার মাজারে আসেন। তারা তার মাজারের চারদিকে রাখা সিন্দুকগুলোতে টাকা-পয়সাও দান করেন।