কক্সবাজারের চকরিয়ায় গরু চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দুই মেয়ে, এক ছেলে ও মা সহ ৫ জনকে রশি দিয়ে বেধেঁ প্রকাশ্য দিবালোকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যন মিরানুল ইসলাম মিরান ও তার পালিত লোকজন।
গত ২১ আগষ্ট হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর ২৩ আগষ্ট দিবাগত রাত থেকে মা-মেয়ে ছেলেকে নিযার্তনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়ে।
সংঘঠিত ঘটনার বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় হতে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি কমিটির প্রধান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ কক্সবাজারের উপ-সচিবকে। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত কাজে ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
অপরদিকে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, চকরিয়া, কক্সবাজার জনস্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে হারাবাংয়ের ভাইরাল হওয়ায় ঘটনায় একটি মামলা নিয়েছেন। মামলাটি চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মেহরাজ উদ্দীন মিরাজ ও স্থানীয় লোকজন জানান, একটি সিএনজি গাড়ীতে পাচঁ লোকের জায়গা হয়। এর পরে কিভাবে একটি গরু সিএনজি গাড়ীতে করে নিয়ে যাচ্ছে বোধগাম্য নয়।
হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের সভাপতির মিরানুল ইসলাম চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) পাঠিয়ে তাদেরকে রশি দিয়ে বেধেঁ তার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যলয়ে নিয়ে আসে। এর পর তাদেরকে পরিষদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রেখে পুনরায় উপর্যপুরি নির্যাতন করতে থাকে। নির্মম নির্যাতনের এই দৃশ্যটি উৎসুক জনতা নীরবে দেখলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। উল্টো চেয়ারম্যানের নির্দেশে নির্মমতার শিকার মা, মেয়ে ও ছেলেসহ ৫ জনকে আসামী করে গরু চুুরির অপবাদে মাহাবুবুল হক বাদী হয়ে থানায় মামলা (নং ২১, তারিখ ২১/০৮/২০২০) দিয়ে আদালতে প্রেরণ করেন।
আসামীরা হল-পারভিন (৪০)স্বামী মৃত আবুল কালাম, মো. এমরান (২১), সেলিনা আক্তার সেলি (২৮) রেজিনা আক্তার (২৩) পিতা মৃত-আবুল কালাম সর্ব সাং শান্তির হাট কুসুমপুর শহীদের কলোনী ১নং ওয়ার্ড, পটিয়া ৬নং ইউনিয়ন পরিষদ চট্টগ্রাম ও মো. চুট্্রু (২৭) পিতা: দেলোয়ার হোসেন সাং বারবাকিয়া ৩নং ওয়ার্ড বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পেকুয়া, কক্সবাজার।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম এর কাছে নির্যাতনের বিষয়ে চাইলে তিনি জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে গরু চুরির বিষয়ে খবর পেয়ে তিনি পরিষদের চৌকিদার দিয়ে তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
চকরিয়ার হারবাং পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ (পরির্দশক) মো: আমিনুল ইসলাম গরু চুরি ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে তিনি পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভতি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গরু চুরির মামলা রুজু হওয়ার পর বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে, রবিবার (২৩ আগষ্ট) দুপুর ১টায় ঘটনাস্থল পরির্দশনে গেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সনেট, চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো: মতিউল ইসলাম ও চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান।
এসময় তারা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা শুনেন। চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মো: মতিউল ইসলাম বলেন, বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত, চকরিয়া, কক্সবাজার স্বপ্রণোদিত হয়ে হারাবাংয়ের ভাইরাল হওয়ায় ঘটনায় জনস্বার্থে একটি মামলা নিয়েছেন। মামলাটি তাকে (চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার) ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বিজ্ঞ আদালতের উক্ত নির্দেশনা পত্রটি হাতে পেয়েছেন বলে জানান।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ সনেট জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের দৃশ্যটি ভাইরাল হওয়ার পর তার দৃষ্টি গোচর হয়। তিনি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থাা নেওয়ার জন্য থানা পুলিশকে প্রযোজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, সংঘঠিত ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় কক্সবাজার থেকে পৃথক দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তন্মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি প্রধান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ কক্সবাজারের উপপরিচালক (উপ-সচিব)কে। বর্তমানেও তিনি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তদন্ত কাজে ঘটনাস্থলে রয়েছেন।