Logo




আধাঁরের অপেক্ষায়!

শাজাহানপুর ( বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
আপডেট করা হয়েছে : শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০

দিনে চুপচাপ।  শুধু আধাঁরের অপেক্ষা । দিনের আলো নিভিয়ে গেলেই রাতের আধাঁর নামার সাথে সাথে শুরু হয় দস্যুতা। আধাঁর যত ঘনিয়ে আসে দস্যুতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। দস্যুতায় লিপ্ত থাকা যন্ত্রের হু হু শব্দ আর শত শত ট্রাকের লক্কর-ঝক্কর, ঝন ঝনানি আর বিকট শব্দের হর্ণ রাতে ঘুমিয়ে থাকা মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়ায় নির্ঘুম রাত কাটছে মানুষের। অপদিকে বেপরোয়া যান চলাচলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ক্ষতি গ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে কৃষি জমি।

এভাবেই চলছে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালি-মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরত্ত্ব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চোপীনগর ইউনিয়নের কচুয়াদহ রঙ্গীলা ব্রীজের পাশ থেকে রাতের আধাঁরে এসকেভেটর লাগিয়ে পাশাপাশি দু’টি মাটির পয়েন্ট থেকে দেদারছে বিটমাটি কাটা হচ্ছে। সন্ধারাতের পর থেকে সকাল ৭-৮টা পর্যন্ত চলা ২০-৩০টি ড্রামট্রাকের বেপরোয়া যাতায়াতের শব্দ আর বিকট শব্দে হাইড্রোলিগ হর্ণের কারণে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে রাস্তার পাশে বসতবাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা আবাল বৃদ্ধ বনিতার।

শাহ আলম নামের এক গণমাধ্যমকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলার দুরুলিয়া গ্রামে দুবলাগাড়ী-কচুয়াদহ সড়কের পাশে তার বাড়ি। গত তিন দিন ধরে সন্ধার পর থেকে সকাল ৭-৮ টা পর্যন্ত দুবলাগাড়ী-কচুয়াদহ সড়কে ২০-৩০টি ড্রামট্রাক মাটি বোঝাই করে বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করে। এই ট্রাকগুলির চালক অধিকাংশই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হেলপার। নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে ঘুমন্ত মানুষের গায়ে ট্রাক উঠে যাওয়ার শংকা আর বিকট শব্দে ছোট ছোট শিশু সন্তানসহ বৃদ্ধ মানুষকেও নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। গণমাধ্যকর্মী হওয়ায় সাধারন মানুষের ধারনা সাংবাদিক চাইলেই এই দূর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ইউএনও, এসিল্যান্ড ও ওসি সহ সংশ্লীষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েও তিনি কোন সুরাহা পাননি। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে সাধারন মানুুষদের এই দূর্ভোগ-দূর্দশার হাত থেকে রক্ষা পেতে সংশীষ্ট প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

এছাড়াও উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের নারচি সোনার পাড়া, মাঝিড়া ইউনিয়নের বাটেপাড়া, চকজোড়া, খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের খলিশাকান্দি, আড়িয়া ইউনিয়নের সোনাইদিঘী, আশেকপুর ইউনিয়নের পারতেকুর এবং খরনা ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রাম থেকে একই ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়া দুই একটি পয়েন্ট কৌশলগত কারণে দুই এক দিন বন্ধ রেখে পুনরায় চালু করছে।

আড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মন্টু জানান, আমরুল ইউনিয়নের নারচি সোনারপাড়া মাটির পয়েন্ট থেকে প্রতিরাতে বেশ কয়েকটি মাটিবোঝাই ট্রাক আড়িয়া বাজার-ডেমাজানী সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। কয়েকদিন আগে আড়িয়া বাজার এলাকায় ট্রাক থামিয়ে নিষেধ করার পরও তারা মানেনি।

উপজেলার ওমর ফারুক নামে এক গণমাধ্যকর্মী জানান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) আশিক খান গত মৌসুমে বেশ কয়েকটি মাটির পয়েন্টে রাতের আধাঁরে অভিযান চালিয়েছেন। সেসময় বালি, মাটি ব্যবসায়ীরা আতংকে ছিলেন। সম্প্রতি এসিল্যান্ড আশিক খান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি চিকিৎসাধিন থাকা অবস্থায় বাহিরে বের না হওয়ার সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছেন এই সমস্ত বালি, মাটি ব্যবসায়ীরা। দিনের বেলা মাটির পয়েন্ট থেকে এসকেভটর তুলে অন্যেত্র লুকিয়ে রেখে সন্ধার পর আবারো নিয়ে এসে দস্যুতা শুরু করে। সাধারন মানুষের চরম ভোগান্তি আর পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ক্ষতি গ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লীষ্ট প্রশাসনকে অনুরোধ জানান তিনি।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা পারভীনের সাথে তার সরকারী মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটিতে আছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে

মন্তব্য

মন্তব্য





এই ধরনের আরও খবর

ফেসবুকে আমরা




Theme Created By ThemesDealer.Com