ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে ৫৬ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩২ কেন্দ্রে ৬০টি ‘ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা’ (সিসি ক্যামেরা) বসানো হয়েছে।
আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অবিহিত করা হয়। শনিবার এসব কেন্দ্রে ‘ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা’ বসানো হয় বলে জানান বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়র কবির।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হবে।
নির্বাচনের জন্য ১৬ প্লাটুন বিজিবি, ২১ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২১ টি মোবাইল টিম থাকছে মাঠে। একইসঙ্গে কাজ করছে র্যাব ও আনসার সদস্যরা।
সিসি ক্যামেরা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে পৌরসভার ৪, ৯, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১৫ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক বা একাধিক কেন্দ্র। সহিংসতার ঝুঁকি থাকায় কেন্দ্রের প্রধান গেটসহ একাধিকস্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ অভিযোগ করেন, ‘প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্র নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা-ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন। পুলিশকে অভিযোগ করেছি একাধিকবার’।
তার অভিযোগের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই কেন্দ্রেও সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।
বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ূন কবির বলেন, যেখানে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে সেখানেই ‘ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা’ স্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এছাড়া ২১ টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩০ এবং সাতটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭০ জন। এরমধ্যেই ভোটগ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
১১৩ টি ভোট কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে। ১১৩ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছাড়াও ৮৩০ টি বুথে ২ হাজার ৬০৩ জন সহকারি প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
৫৩টি ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত করে আইনশৃংখ্যলা রক্ষায় বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রার্থীরা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র সম্পর্কে শঙ্কার তথ্য দিয়েছিল। এসব তথ্য যাচাই করে পুলিশ ৫৬ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে।
ওসি হুয়ামুন কবির বলেন, পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সব ধরণের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ‘নিষেধাজ্ঞা’ লঙ্ঘন করে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়ায় সাড়ে চারশ মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে।
নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন করে প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র থেকে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ একজন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
শুক্রবার শেষ দিনে বগুড়া শহরের সাতমাথায় মুজিবমঞ্চে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু ওবায়দুল হাসানের নৌকার পক্ষে নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নৌকায় ভোট চান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দ জানান, ‘এই নির্বাচনে আমার পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারের পরিবেশ ভালো ছিল। প্রশাসন দক্ষতার সঙ্গে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু সংকট সৃষ্টি হয়েছে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে। এখন আমার নির্বাচনী পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে’।
নির্বাচনের পরিবেশ ভালো মন্তব্য করে বিএনপির প্রার্থী রেজাউল করিম বাদশা বলেন, নির্বাচনে প্রচরণার ক্ষেত্রে কোনো বাধার মুখে পড়িনি। কিন্তু সংকট দেখা যাচ্ছে কালো টাকার ব্যক্তির কারণে। তবে বগুড়ায় কালো টাকা দিয়ে বেশি ভোট কিনতে পারবে না। এখানে সরকারদলীয় লোকজন কিংবা প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। প্রশাসনের কার্যাকলাপে মনে হচ্ছে, তারা এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচন করার পক্ষে আছে। বগুড়ায় এর আগে বিএনপির প্রার্থীরা লক্ষাধিক ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও তার প্রতিফলন ঘটবে।