অবশেষে বোধোদয়। ভারতজুড়ে আতঙ্ক ও সমালোচনার মুখে হরিদ্বারের কুম্ভমেলার প্রতীকী উদ্যাপনে মুখ খুললেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার জুনা আখড়ার স্বামী অবধেশানন্দ গিরির সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাধু সন্তদের প্রতীকী উদ্যাপনে তিনি অনুরোধ করেছেন। বলেছেন, ‘করোনা মোকাবিলায় তাঁদের সহযোগিতা প্রার্থনা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী মোদির অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন স্বামী অবধেশানন্দ গিরি। পাল্টা অনুরোধ জানিয়ে তিনি সবাইকে অনুরোধ করেছেন, বিপুলসংখ্যায় সাধু সন্ত ও সাধারণ মানুষ আর যেন হরিদ্বারে স্নান করতে না আসেন। তবু যাঁরা আসবেন, তাঁরা যেন কোভিডবিধি কঠোরভাবে মেনে চলেন।
দ্বিতীয় দফার কোভিড আতঙ্কের মধ্যেই শুরু হয় হরিদ্বারের গঙ্গায় পূর্ণ কুম্ভের স্নান। পুরাণ অনুযায়ী দেবতা ও রাক্ষসদের সম্মিলিত সমুদ্র মন্থনের পর উঠে আসা অমৃত ভাণ্ড নিয়ে দেবতারা পালাতে শুরু করলে হরিদ্বার ও প্রয়াগে (সাবেক এলাহাবাদ) কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়েছিল। এই দুই স্থান ছাড়া মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনী ও মহারাষ্ট্রের নাসিকেও রাখা হয়েছিল অমৃত ভাণ্ড। প্রতি তিন বছর অন্তর তাই এই চার স্থানে কুম্ভের পুণ্য স্নান হয়। কিন্তু মূল আকর্ষণ ১২ বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগের পূর্ণ কুম্ভ। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী সব পুণ্যের সেরা পুণ্য পূর্ণ কুম্ভ স্নান, চলতি বছর যা শুরু হয়েছে ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির দিন, শেষ হবে ২৭ এপ্রিল চৈত্র পূর্ণিমার শাহী স্নানে।
ইতিমধ্যে ১১ মার্চ মহা শিবরাত্রি, ১২ এপ্রিল সম্ভাতি অমাবস্যা ও ১৪ এপ্রিল বৈশাখীতে তিনবার শাহী স্নান হয়ে গেছে। স্বামী অবধেশানন্দ গিরিকে সেই কথাই মনে করিয়ে দিয়ে মোদি বলেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাধু সন্তদের এই সহযোগিতা আমাদের শক্তি জোগাবে।’
কোভিড সত্ত্বেও এত দিন ধরে কেন্দ্র বা বিজেপি–শাসিত উত্তরাখন্ডের রাজ্য সরকারের কেউই কুম্ভমেলায় লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে বাধা দেননি। বরং উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী তীর্থ সিং রাওয়াত যুক্তি দেখিয়ে ছিলেন, খোলা আকাশের নিচে পুণ্য সলিলা গঙ্গা স্নানে ভয়ের কিছু নেই। তা ছাড়া গঙ্গার পুণ্য প্রবাহে করোনা ভেসে যাবে। হরিদ্বারে হাজারে হাজারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া এবং সাধু মৃত্যু যে সমালোচনার ঝড় তোলে তা সামাল দিতে অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ। যদিও মনে করা হচ্ছে, বোধোদয় সত্ত্বেও অনেক দেরি হয়ে গেছে। মুম্বাইয়ের শিবসেনা নেত্রী এবং বৃহন্মুম্বাই পুরসভার মেয়র কিশোরী পেডনেকর ক্ষুব্ধভাবে বলেছেন, পুণ্যার্থীরা কুম্ভের প্রসাদ হিসেবে করোনা সংক্রমণ উপহার দিতে চলেছেন। হরিদ্বারফেরত মানুষদের মুম্বাইয়ে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সফরের সময় মাস্কহীন অবস্থায় ধরা পড়লে, থুতু ফেললে বা কোনোভাবে প্ল্যাটফর্ম নোংরা করলে ৫০০ রুপি জরিমানা করা হবে। আপাতত ছয় মাস এই শাস্তি বহাল থাকবে।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার জনের। এই সময়ে শুধু দিল্লিতে রোগী শনাক্তের সংখ্যা ২৪ হাজারের বেশি। এ অবস্থায় ল্যানসেট কোভিড-১৯ কমিশনের ইন্ডিয়া টাস্কফোর্স আগামী দুই মাস বদ্ধ স্থানে সব ধরনের সমাবেশ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪৯ জন।
আরও পড়ুন:
কুম্ভমেলায় ৫ দিনে ১৭০০ জনের করোনা শনাক্ত